উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক


উইকিমিডিয়া প্রকল্পের অবদানকারীগণ

Article Images

উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক (ইংরেজি: Wisden Cricketers' Almanack) যা সচরাচর উইজডেন বা "ক্রিকেটের বাইবেল" নামে সমধিক পরিচিত। এটি ক্রিকেটের সহায়ক পুস্তক হিসেবে যুক্তরাজ্য থেকে সাংবাৎসরিকভাবে প্রকাশিত হয়ে থাকে। এছাড়াও, উইজডেন বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রীড়া গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।[]

Wisden 1878 edition

ইংরেজ ক্রিকেটার জন উইজডেন (১৮২৬-১৮৮৪) কর্তৃক ফ্রেড লিলিহুয়াইটের দ্য গাইড টু ক্রিকেটার্সের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ১৮৬৪ সালে উইজডেন প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই এর বার্ষিক প্রকাশনা বর্তমান দিন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। ফলে এটি ক্রীড়া জগতের ইতিহাসে দীর্ঘতম ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রকাশনা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ষষ্ঠ সংস্করণ থেকে এর বর্তমান শিরোনামে প্রকাশিত হচ্ছে। প্রথম পাঁচটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল দ্য ক্রিকেটার'স অ্যালমেনাক নামে।

১৮৮০ সালে চার্লস পার্ডন, জর্জ কেলি কিং-কে সাথে নিয়ে ক্রিকেট রিপোর্টিং এজেন্সী বা সিআরএ নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৭ সালে পার্ডন উইজডেনের সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তখন থেকেই এটি সর্বদাই ক্রিকেট রিপোর্টিং এজেন্সী'র সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রেস এসোসিয়েশন বা পিএ'র সাথে একীভূত না হওয়া পর্যন্ত ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ক্রিকেট রিপোর্টিং এজেন্সী এ বার্ষিকী প্রকাশনার যাবতীয় দায়-দায়িত্ব বহন করে।[]

প্রতিষ্ঠানটি তার শততম সংস্করণ উপলক্ষে ১৯৬৩ সালে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচে উইজডেন ট্রফি প্রদান করে।

সমসাময়িক সংস্করণগুলোর বিষয়বস্তু নিম্নোক্ত বিভাগে বিভক্ত:

শতাধিক পৃষ্ঠাকে ঘিরে প্রবন্ধ লিপিবদ্ধ থাকে। এতে ক্রিকেট সম্বন্ধীয় যাবতীয় বিষয়সহ সম্পাদকীয় ভাষ্য রয়েছে। সম্পাদকীয় ভাষ্যে প্রায়শঃই ক্রিকেট বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত বিষয় এবং সর্বদাই আলোচিত-সমালোচিত বিষয়গুলোর কথকতা উল্লেখ করা হয়।

সনাতনী ধাঁচে উইজডেন বছরের সেরা ক্রিকেটার পুরস্কারটি ১৮৮৯ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও, ২০০৪ সালে উইজডেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটার পুরস্কারটির প্রবর্তন করা হয়।

প্রথাগতভাবে প্রধান উৎস হিসাবে ক্রিকেট খেলাটির প্রধান পরিসংখ্যানগুলোকে গ্রহণ করা হয়। যদিও এতে কখনো ব্যাপকভাবে গ্রহণের চেষ্টা করা হয়নি। আজকাল রেকর্ড অধ্যায়ে অনেক বিস্তারিত তথ্য ও পরিসংখ্যান লিপিবদ্ধ থাকে। তন্মধ্যে অনলাইনে উইজডেনের সহযোগী ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো.কমে আরও অনেক বেশি ক্রিকেট সম্বন্ধীয় তথ্য রয়েছে এবং ব্যাপক ও ভিন্ন আঙ্গিকে আগ্রহীদের চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়ে থাকে।

এ অংশটি বইয়ের সর্বাপেক্ষা বৃহত্তম অধ্যায়। বৃহৎ ও ব্যাপক আঙ্গিকে ইংরেজদের ক্রিকেট খেলার বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়। তন্মধ্যে, পূর্ববর্তী গ্রীষ্মকালীন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের স্কোরকার্ড এবং ইংরেজ ক্রিকেটের মাইনর কাউন্টি, দ্বিতীয় একাদশ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যালয় এবং প্রিমিয়ার ক্লাব ক্রিকেট খেলার সার-সংক্ষেপ অন্যতম।

এ অংশে সকল ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিস্তারিত বিবরণ থাকে। এছাড়াও, ইংল্যান্ড ব্যতীত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অন্যান্য দেশের প্রথম শ্রেণীর অভ্যন্তরীণ ক্রিকেটের বিবরণ সংক্ষিপ্ত আকারে পরিবেশন করা হয়।

এই সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ে ২০১০ সালের সংস্করণে ৮০ পৃষ্ঠা রয়েছে। এতে উইজডেন সম্পর্কীয়সহ সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথ্যাদি রয়েছে। এছাড়াও, ক্রিকেটের নিয়ম-কানুন পরিশিষ্টে রয়েছে। কার্যকরী কমিটির সভার বিবরণ, গৃহীত সিদ্ধান্ত, ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি এবং পাওয়ারপ্লে সম্পর্কীয় নিবন্ধের কথকতা রয়েছে।

এই বিভাগে ঘটনাপঞ্জী বিশেষতঃ পূর্ববর্তী বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। এছাড়াও, ঐ বছরে প্রকাশিত অন্যান্য ক্রিকেট বই-পুস্তকের উপর পর্যালোচনা করা হয়। উল্লেখযোগ্য ক্রিকেটারদের অবসর গ্রহণ এবং অত্যন্ত উঁচু স্তরের ক্রিকেটারদের মৃত্যু সম্পর্কীয় ঘটনাবলীও এ অংশে তুলে ধরা হয়।

এই বিভাগে পরবর্তী ৭ বছরের আন্তর্জাতিক এবং ইংরেজদের ঘরোয়া ক্রিকেটের সময়সূচী উল্লেখ থাকে। বিষয়সূচীতে অস্বাভাবিক, অনাকাঙ্খিত এবং দৃষ্টিগোচরীভূত বিষয়াদি রয়েছে। তন্মধ্যে - সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া হট এয়ার বেলুনের জন্য খেলা বন্ধ; নগ্ন নৃত্য করার জন্য ক্রিকেটার গ্রেফতার; প্যারাস্যুটের সাহায্যে ফাইন লেগে অবতরণ; সারারাত মাঠে আম্পায়ারকে আটকিয়ে রাখা অন্যতম।

উইজডেন একটি ছোট আকৃতির কিন্তু খুব মোটা কাগজে বই আকারে মুদ্রিত। আধুনিক সংস্করণের বইগুলোয় দেড় হাজারেরও অধিক পৃষ্ঠা থাকে। উজ্জ্বল হলুদ রঙের প্রচ্ছদ নিয়ে ৭৫তম সংস্করণে ১৯৩৮ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রকাশিত হচ্ছে। এর পূর্বে এটি হলুদ, ঈষৎ পীতবর্ণ এবং স্যামন গোলাপী রঙের মিশ্রিত প্রচ্ছদে প্রকাশিত হয়। ঐ সংস্করণগুলোতেও এরিক র‌্যাভিলাইয়াসের সম্পাদনায় প্রথমবারের মতো বিখ্যাত দু'জন ক্রিকেটারের কাঠে খোঁদাইকৃত ছবি প্রদর্শিত হতো।[] এটি শুধু অভ্যন্তরীণ ইংলিশ ক্রিকেট মৌসুম শুরুর আগে প্রতি বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত হয়েছিল। ২০০৩ সাল কাঠে খোদাইকৃত ছবির প্রচ্ছদ চিত্রটি পরিবর্তিত হয়। প্রচ্ছদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে বর্তমান ক্রিকেটারদের ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে, যদিও এখনো খুবই ছোট আকারে পূর্বের প্রচ্ছদ চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

এটি শক্ত এবং পাতলা - উভয় প্রকার কাগজেই প্রকাশিত হয়েছিল। ২০০৬ সাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বৃহৎ সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে। পড়ার অসুবিধাহেতু পাঠকদের কাছ অনুরোধের প্রেক্ষাপটেই এটি করতে করতে হয়েছে। সাধারণ সংস্করণের তুলনায় এটি দ্বিগুণ এবং সীমিত পর্যায়ে পাঁচ হাজার সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। অনেক মানসম্পন্ন বইয়ের একটি হিসেবে 'উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক' নিজের স্থান করে নিয়েছে অবলীলাক্রমে।

বহু বছর ধরে অ্যালমেনাকটি লক্ষণীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। প্রথম সংস্করণে মাত্র ১১২ পৃষ্ঠা ছিল। প্রচ্ছদে 'ইংরেজদের গৃহযুদ্ধ' এবং 'ওক' বিজয়ীর ছবি ছিল।

ইতোমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে যে, লরেন্স বুথ নামীয় একজন ক্রিকেট লেখক ২০১২ সালের উইজডেন সংস্করণের জন্য সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। এছাড়াও, সহঃ সম্পাদক হিসেবে তার সহযোগী থাকবেন - হিউজ চেভেলিয়ার।[] বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, উইজডেন প্রকাশনার ১৪৮ বছরের ইতিহাসে মাত্র ১৭জন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা হলেন -

উইজডেন সম্পাদকদের তালিকা
ক্রমিক নং নাম মেয়াদকাল
১। ডব্লিউ. এইচ. ক্রকফোর্ড/ডব্লিউ. এইচ. নাইট ১৮৬৪ - ১৮৬৯
২। ডব্লিউ. এইচ. নাইট ১৮৭০ - ১৮৭৯
৩। জি. এইচ. ওয়েস্ট ১৮৮০ - ১৮৮৬
৪। চার্লস এফ. পার্ডন ১৮৮৭ - ১৮৯০
৫। সিডনি পার্ডন ১৮৯১ - ১৯২৫
৬। সি. স্টুয়ার্ট কেইন ১৯২৬ - ১৯৩৩
৭। সিডনি জে সাউদার্টন ১৯৩৪ - ১৯৩৫
৮। উইলফ্রেড এইচ. ব্রুকস্‌ ১৯৩৬ - ১৯৩৯
৯। হেডোন হুইটেকার ১৯৪০ - ১৯৪৩
১০। হুবার্ট প্রেস্টন ১৯৪৪ - ১৯৫১
১১। নর্মান প্রেস্টন ১৯৫২ - ১৯৮০
১২। জন উডকক ১৯৮১ - ১৯৮৬
১৩। গ্রেইম রাইট ১৯৮৭ - ১৯৯২ এবং ২০০১ - ২০০২
১৪। ম্যাথু এঞ্জেল ১৯৯৩ - ২০০০ এবং ২০০৪ - ২০০৭
১৫। টিম ডি লিস্‌লে ২০০৩
১৬। স্কাইল্ড বেরি ২০০৮ - ২০১১
১৭। লরেন্স বুথ ২০১২ - বর্তমান

প্রকাশনার প্রত্যাশা অনুযায়ী উইজডেনের আকার এবং দীর্ঘস্থায়িত্বের দরুন অবদানকারীর সংখ্যাও রয়েছে অনেক। অধিকাংশ অবদানকারীই প্রতিবছর বিভিন্ন স্তরের ক্রিকেট প্রতিবেদন লেখার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়া, জীবনী, পর্যালোচনা এবং নিজস্ব মতামত ব্যক্ত সহকারে প্রতিবেদন প্রদানকারীর সংখ্যাও কম নয়। সাধারণতঃ বিখ্যাত ক্রিকেট লেখকগণই উইজডেনের জন্য লিখে থাকেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অনেক ক্রিকেট খেলোয়াড়ওনেভিলে কারদুস অনেক অনেক উল্লেখযোগ্য রচনা লিখেছেন এবং বহু বছর ধরে জন আর্লট বইটির পর্যালোচনার দায়িত্ব নিয়েছেন।

১৯০২ সাল থেকে উইজডেন কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর পাঁচজন ক্রিকেটারকে পুরস্কার প্রদান করে আসছে। এরজন্য তাদের পূর্বের বছরের অসাধারণ সফলতাকে নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্যতিক্রম হিসেবে রয়েছে - প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। ১৯১৭-১৮, ১৯৪১-৪৬ সালগুলোতে কাউকে পুরস্কৃত করা হয়নি। কিন্তু ২০১১ সালের জন্য বছরের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের পরিবর্তে চার জন্য ক্রিকেটারকে মনোনীত করা হয়েছে। তারা হলেন -

পাতানো খেলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৫ম স্থান নির্ধারণ করা হয়নি।[]

২০১২ সালে টিম ব্রেসনান, অ্যালাস্টেয়ার কুক, গ্লেন চ্যাপেল, অ্যালেন রিচার্ডসন এবং কুমার সাঙ্গাকারা বর্ষসেরা ক্রিকেটাররূপে ভূষিত হন।

স্ট্যানলী কাব্রিকের পরিচালনায় 'এ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ' চলচ্চিত্রে কারাগার গভর্নরের টেবিলে 'উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক' রাখার দৃশ্য চিত্রায়ণ করা হয়েছিল।[]

'উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক' সংগ্রহ করা অনেক ক্রিকেটপ্রেমীদের অন্যতম শখের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুরুর দিকের সংস্করণগুলো অত্যন্ত উচ্চ মূল্যের অধিকারী। প্রথম সংস্করণটি মাত্র ১১২ পৃষ্ঠাব্যাপী ছিল এবং মূল্য ধরা হয়েছিল এক সিলিং। অথচ প্রচ্ছদবিহীন অবস্থায় কপি করা সংস্করণ বিক্রী হচ্ছে বার হাজার পাউন্ড স্টার্লিংয়ে। প্রকৃত পুস্তকটি বেশ দুষ্প্রাপ্য যা শুধু বিক্রেতার সাথে আলোচনাসাপেক্ষে সংগ্রহ করা যেতে পারে। দুইটি বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে প্রকাশিত সংস্করণগুলো আরও অধিক দুষ্প্রাপ্য। বর্তমান সময়ে শুরুর দিককার অনেক সংস্করণ ফটোকপি আকারে প্রকাশিত হচ্ছে। সংগ্রহশালা দেখার একটি উদাহরণ রয়েছে উইজডেনের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটে, এখানে

  1. http://www.dailymail.co.uk/money/article-1092189/Harry-Potter-publisher-Bloomsbury-bowled-catch-Wisden.html
  2. Wisden Cricketers' Almanack, 1966 edition, pp vi–vii.
  3. http://content-www.cricinfo.com/wisdenalmanack/content/story/155556.html
  4. Wisden Cricketers' Almanack Announcement ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে Retrieved 6 Jan 2011
  5. Awarded to a Pakistani player but not listed as a result of alleged match-fixing. "If [the player in question] were exonerated, then it would be possible to reconsider the position," explained [Scyld] Berry. "That's why I didn't pick anyone else instead. But as things stand, we don't feel we can choose him. It's all very sad."
  6. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১১