কাবাডি


উইকিমিডিয়া প্রকল্পের অবদানকারীগণ

Article Images

কাবাডি

(হাডুডু থেকে পুনর্নির্দেশিত)

'কাবাডি উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা।[] বর্তমানে কাবাডি আন্তর্জাতিক ভাবেও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই খেলা সাধারণত কিশোর থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সব ধরনের ছেলে এবং মেয়েরা খেলে থাকে। সাধারণত বিশেষ উৎসব বা পালা-পার্বণে বেশ আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে কাবাডি খেলার আয়োজন করা হয়। কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা।[] বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়েছে। পূর্বে কেবল মাত্র গ্রামে এই কাবাডি খেলার প্রচলন দেখা গেলেও বর্তমানে সব জায়গায় কাবাডি খেলা প্রচলিত হয়েছে।

কাবাডি

গ্রামে কাবাডি খেলার দৃশ্য

সর্বোচ্চ ক্রীড়া পরিচালনা সংস্থাআন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশন
উপনামহা-ডু-ডু
বৈশিষ্ট্যসমূহ
শারীরিক সংস্পর্শঅনুমোদিত
দলের সদস্য৭ (প্রত্যেক দলে)
মিশ্রিত লিঙ্গহ্যাঁ
ধরনদলগত খেলা
খেলার সরঞ্জামনাই
ভেন্যুকাবাডি কোর্ট
প্রচলন
দেশ বা অঞ্চলভারতীয় উপমহাদেশ, এশিয়া
অলিম্পিকপ্রদর্শনী খেলা ১৯৩৬ অলিম্পিক
২০০৬ এশিয়ান গেমসে একটি কাবাডি খেলা।
২০০৬ এশিয়ান গেমসে একটি কাবাডি খেলা।

১৯৭৮ সালে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কাবার্মার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। [] ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় প্রথম এশিয়ান কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে আস্তে আস্তে কাবাডি খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

নিম্নলিখিত প্রতিযোগিতাগুলি স্ট্যান্ডার্ড ফরমেটে খেলা হয়, চক্র স্টাইল কাবাডি এর জন্য, দেখুন পাঞ্জাবি কাবাডি

আদর্শ পদ্ধতির কাবাডি বিশ্বকাপটি আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশন (আইকেএফ) দ্বারা পরিচালিত একটি বহিরঙ্গন আন্তর্জাতিক কাবাডি প্রতিযোগিতা, যাতে জাতীয় পুরুষ এবং মহিলা দলগুলির প্রতিদন্দ্বীতা করে। প্রতিযোগিতাটি এর আগে ২০০৪, ২০০৭ এবং ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সমস্ত টুর্নামেন্ট ভারত জিতেছে। ২০১৬ সালের শিরোপা জয়ের জন্য চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার ফাইনালে ভারত ইরানকে ৩৮-২৯ পয়েন্ট ব্যবধানে হারিয়েছিল।

ওয়ার্ল্ড কাবাডি ফেডারেশন নামে একটি নতুন কাবাডি সংস্থা প্রতিষ্ঠার পরে, ২০১৯ সালে মালয়েশিয়ার মালাক্কায় বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়। এটি কাবাডি ইতিহাসের বৃহত্তম বিশ্বকাপ, যেখানে ৩২ টি পুরুষ দল অংশগ্রহণ করে এবং পাকিস্তান বিজয়ী দল হিসেবে ঘোষিত হয়।

১৯৯০ সাল থেকে এশিয়ান গেমসে কাবাডি খেলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় দল এশিয়ান গেমসে প্রতিটি পুরুষ এবং মহিলাদের কাবাডি প্রতিযোগিতা জিতেছিল। ২০১৮ এশিয়ান গেমসে, ইরান ভারতের বাইরে প্রথম দেশ হিসেবে কাবাডিতে স্বর্ণ পদক জিতেছিল, ভারত পুরুষ দল ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিল, এবং ভারতের মহিলা দল রৌপ্য জয় করেছিল।

প্রো কাবাডি লীগটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিপণনে স্থানীয় ব্রডকাস্টার স্টার স্পোর্টস এর সমর্থন এবং খেলাধূলার নিয়মাবলী এবং তার উপস্থাপনায় আধুনিকতা ও নতুনত্ব এনে এটি টেলিভিশনের দর্শকদের জন্য আরও উপযুক্ত করে উন্মোচন করা হয়; টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে তার ব্যবসায়ের মডেল করেছে। প্রো কাবাডি লীগ দ্রুত ভারতীয় টেলিভিশনে রেটিংয়ের সাফল্যে পরিণত হয়; ২০১৪ মৌসুমটি কমপক্ষে ৪৩৫ মিলিয়ন দর্শক দেখেছিল এবং উদ্বোধনী চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচটি ৯৮.৬ মিলিয়ন দর্শক দেখেছে।

কাবাডি উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় খেলা। কাবাডি ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (কেএফআই) ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি একটি আদর্শ পদ্ধতি সংকলন করেছিল। পাকিস্তানের কাবাডির পরিচালনার জন্য কমিটি হল পাকিস্তান কাবাডি ফেডারেশন।

বাংলাদেশে খেলাটি হা-ডু-ডু নামে পরিচিত, যা কাবাডির সাথে ভিন্নতা রয়েছে, যা প্রাচীন কালে ফিরে আসে। হা-ডু-ডু এর কোনও নির্দিষ্ট বিধি নেই এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন বিধি দিয়ে খেলা হয়। কাবাডি হল বাংলাদেশের জাতীয় খেলা, ১৯৭২ সালে অফিসিয়াল স্ট্যাটাস দেওয়া হয়।[] ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের অপেশাদার কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়েছিল।

১৯৯৬ সালে ইরানে কাবাডির সম্প্রদায় গঠিত হয়েছিল, একই বছর তারা এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনে যোগদান করেছিল এবং ২০০১ সালে তারা আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনে যোগদান করেছিল। ইরান অপেশাদার কাবাডি ফেডারেশন ২০০৪ সালে গঠিত হয়েছিল।

কাবাডি নেপালের অন্যতম জাতীয় খেলা। তৃতীয় শ্রেণিতে বা বেশিরভাগ নেপালি স্কুলে শুরু হওয়া বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খুব কম বয়সেই কাবাডি খেলানো এবং শেখানো হয়। মজাকরা, ফিট রাখার জন্য এবং ব্রিটিশ এশীয় সম্প্রদায়ের সৈন্যদের নিয়োগের প্রলোভন হিসাবে কাবাডিকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীও খেলত। কাবাডি ভারতীয়, বাংলাদেশী এবং পাকিস্তানি অভিবাসীরা যুক্তরাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। যুক্তরাজ্যের কাবাডির পরিচালনা কমিটি হল ইংল্যান্ড কাবাডি ফেডারেশন যুক্তরাজ্য।

  • মাঠঃ কাবাডি খেলার বালকদের মাঠ লম্বায় ১২.৫০ মিটার চওড়ায় ১০ মিটার হয়। এবং বালিকাদের কাবাডি খেলার মাঠ লম্বায় ১১ মিটার এবং চওড়ায় ৮ মিটার হয়। খেলার মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি লাইন টানা থাকে যাকে মধ্যরেখা বা চড়াই লাইন বলে। এই মধ্য রেখার দুই দিকে দুই অর্ধে দুটি লাইন টানা হয় যাকে কোল লাইন বলে। মৃত বা আউট খেলোয়াড়দের জন্য মাঠের দুই পাশে ১ মিটার দূরে দুটি লাইন থাকে যাকে লবি বলা হয়।
  • সদস্যঃ প্রতি দলে ১২ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতি দলের ৭ জন খেলোয়াড় একসাথে মাঠে নামে। বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে থাকে। খেলা চলাকালীন সর্বাধিক তিন জন খেলোয়াড় পরিবর্তন করা যাবে।
  • সময়ঃ ৫ মিনিট বিরতি সহ দুই অর্ধে পুরুষদের ২৫ মিনিট করে এবং মেয়েদের ২০ মিনিট করে খেলা হবে। খেলা শেষে যেই দল বেশি পয়েন্ট পাবে সেই দলই জয়ী হবে। দুদলের পয়েন্ট সমান হলে দুঅর্ধে আরও ৫ মিনিট করে খেলা হবে। এরপরেও যদি পয়েন্ট সমান থাকে তবে যে দল প্রথম পয়েন্ট অর্জন করেছিল সে দলই জয়ী হবে।
  • পয়েন্টঃ যদি কোন খেলোয়াড় মাঠের বাহিরে চলে যায় তাহলে সে আউট হবে। এভাবে একটি দলের সবাই আউট হলে বিপক্ষ দল একটি লোনা(অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট) পাবে। মধ্যরেখা থেকে দম নিয়ে বিপক্ষ দলের কোন খেলোয়াড়কে(একাধিক হতে পারে)স্পর্শ করে এক নিঃশাসে নিরাপদে নিজেদের কোর্টে ফিরে আসতে পারলে, যাদের কে স্পর্শ করবে সে বা তারা কয় জনই আউট হবে। এভাবে যতজন আউট হবে তাদের প্রত্যেকের জন্য এক পয়েন্ট পাওয়া যাবে।
  • সতর্কতাঃ এক নিঃশাসে স্পষ্ট ভাবে পুণঃপুণঃ কাবাডি বলে ডাক দেওয়াকে "দম নেওয়া" বলে। এই দম মধ্যরেখা থেকে শুরু করতে হবে।বিপক্ষ কোর্টে একসাথে একাধিক আক্রমণকারী যেতে পারবে না। কোন আক্রমণকারী বিপক্ষ দলের কোর্টে দম হারালে এবং বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তাকে স্পর্শ করতে পারলে সে আক্রমণকারী আউট বলে গণ্য হবে।

উইকিমিডিয়া কমন্সে কাবাডি সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।

  1. বাংলাদেশের খেলাধুলা, রশীদ হায়দার, বাংলা একাডেমী
  2. "A tale of kabaddi, Bangladesh's national sport"Dhaka Tribune। ২০১৬-১২-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-০৮
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৮ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১১
  4. গোফরান ফারুকী (২০১২)। "কাবাডি"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743